দেশের বড় পাঁচটি পাবলিক পরীক্ষা পেছাচ্ছে করোনায়
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের পাঁচটি পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। চলতি বছরের নভেম্বরে নির্ধারিত পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী বা পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তার মধ্যে পিইসি ও জেএসসি পিছিয়ে ডিসেম্বরে নেয়ার চিন্তা চলছে
বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ১৫ দিন পর চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। আর আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও পেছানোর চিন্তাভাবনা চলছে। ফেরুয়ারিতে এসএসসি ও এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হবে না। তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আগামী বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপরের ক্লাসে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। ক্লাস না হওয়ায় সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে বড় এ পাবলিক পরীক্ষাগুলো আয়োজন করা সম্ভব হবে না।
বর্তমান ছুটিতে ইতোমধ্যে দশম শ্রেণির প্রি-টেস্ট পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। অক্টোবরে নির্ধারিত আছে টেস্ট পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এখন পর্যন্ত দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত করা যায়নি। অথচ এরা আগামী বছরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ফলে আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বেলায় সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নভেম্বরে নির্ধারিত পিইসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়াও বন্ধ আছে। এটিও পিছিয়ে ডিসেম্বরে নেয়ার চিন্তা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার সময়সূচি। পৌনে তিন মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরও দুই মাসেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মাস বন্ধ থাকতে পারে শ্রেণি কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসের কী হবে আর পরবর্তী শ্রেণিতে পদোন্নতির মূল্যায়ন বা অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নেয়া হবে কীভাবে?
নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বিভাগের দুটি সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে শিক্ষাবর্ষ দুই মাস বাড়িয়ে সিলেবাস শেষ করে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ের ওপর পাঠদান করতে বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাবে সায় নেই বেশিরভাগ কর্মকর্তার। তারা প্রস্তাবটিকে যথোপযুক্ত বলে মনে করছেন না। কেননা শিক্ষার্থীরা বাসায় থেকে এমনিতে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। এর মধ্যে নতুন বছরেও পুরনো ক্লাসে রেখে দিলে শিক্ষার্থীদের জন্য তা বড় ধরনের আঘাত হতে পারে। তাই তারা সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে সীমিত আকারে মূল্যায়ন বা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বড় বড় পরীক্ষা পিছিয়ে নিতে হবে। অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষা প্রয়োজনীয় সিলেবাস শেষ করে প্রয়োজনে নভেম্বরের পরিবর্তে ডিসেম্বরে পরীক্ষা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মূল্যায়নের একমাত্র পথই হলো পরীক্ষা। তাই এটা বাতিলের সুযোগ কম। তবে যে পথেই আমরা যাই না কেন, ঐচ্ছিক ছুটিতে একটা সমন্বয় করতে হবে। আর ক্ষতি পোষাতে কমপক্ষে দুই-তিন বছরের পরিকল্পনা নিতে হবে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘(করোনার কারণে) ইতোমধ্যে লেখাপড়ায় বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। অন্যান্য শ্রেণির ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু পড়ালাম ততটুকুর মধ্যে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির ক্ষেত্রে সেই সুযোগটা নেই। এই তিনটি পরীক্ষাই হয়তো পেছানো লাগতে পারে।’
কোন মন্তব্য নেই